রাজধানীতে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারকে (২৩) ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
তিন মাসের ভিতরে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে।
আইনজীবীরা বলেন, এ রায় নিয়ে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আর আপিল করবে না বলে আইনজীবীর মাধ্যমে জানিয়েছে। তাই সর্বসম্মত জাজমেন্ট দিয়েছেন আদালত।
রায়ে আদালত বলেছেন, তিন মাসের মধ্যে এক সঙ্গে ২০ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইনকে নির্দেশ দেয়া হলো। ওই অর্থ দিয়ে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্দেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন জমা দিবেন গ্রিনলাইন কতৃপক্ষ। আর হাতে টাকা পাওয়ার এক সপ্তাহ পরে রাসেল সরকার ব্যাংকের হিসাব জমা দিবেন।
এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিনে বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রাসেলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার সামসুল হক রেজা ও জহির উদ্দিন লিমন। গ্রিনলাইন পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও মো. সাইফুল আলম।
রায়ের পর গ্রিনলাইনের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আগে রাসেল সরকারকে ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়েছি। আদালত আরও ২০ লাখ টাকা তিন মাসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা গ্রিনলাইন মালিকের সঙ্গে আলাপ করে এ ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হওয়ার পর আদালত আদেশ দিয়েছেন। এটা সর্বসম্মতিক্রমে একটি রায়। এ কারণে গ্রিনলাইনের পক্ষে আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো না।
তিনি আরও বলেন, আদালত বললেন আপনারা একটা সম্মত অর্থের পরিমাণ বলেন। আমি আদালতকে বললাম আগে প্রায় ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা দিয়েছি। এর বাইরে আমি ১৫ লাখ টাকার কথা বলেছিলাম। তখন আদালত বললেন-১৫ লাখ টাকা রাজি হলে বাড়িয়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেবেন। তিন মাসের মধ্যে আদালত এ টাকা দিতে বলেছেন। মোটামুটি একটা সম্মত রায়। মানবিক কারণে আমরা সম্মত হয়েছি। যেহেতু সে পা হারিয়েছে। তাকে একটা ক্ষতিপূরণ দেয়া দরকার।
রিটকারী আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, ইতিপূর্বে তারা ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। তিন লাখ ৪২ হাজার টাকার চিকিৎসা দিয়েছে। আদালত সবদিক বিবেচনা করে, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। এখন তিনমাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে বলেছেন। গ্রিনলাইন পরিবহনের আইনজীবীর অ্যাডমিশনের ভিত্তিতে এটা হয়েছে।
এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আজকের দিন নির্ধারণ করেন। আদালতে ওইদিন রাসেলের পক্ষে ছিলেন খন্দকার সামসুল হক রেজা। গ্রিনলাইন পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।
গত ৫ মার্চ এ মামলায় ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য যে কোনো দিন অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালক রাসেলের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই রাসেলের বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা।
এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। আদালত ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করে রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং রাসেলের কৃত্রিম পা সংযোজন করে দেয়।