ফারাক্কা অভিশাপের সাথে বিষের ফোঁড়া তিস্তা ব্যারেজ নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের জনগনের তিক্ততা বহু দিনের। কিন্তু তিস্তা ব্যারেজ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ দিনের থাকা কষ্ট ও ক্ষতিকর অবস্থার অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ভারতের সাথে বনিবনা না হওয়ায়
তিস্তা মহা প্রকল্পের কাজ চীন কে দিয়ে করাবে বাংলাদেশ !
তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে লুকোচুরি খেলাটা ভারতের জন্য একধরনের সাধারন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশীরা। বছরের পর বছর ভারতের সাথে কূটনৈতিক ভাবে তিস্তা নদীর ব্যাবস্থাপনা নিয়ে সমস্যার সমাধান চাওয়া হলেও ভারতীয় পক্ষ থেকে কার্যত বিষয়টি অচল করে রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারেজ নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের ব্যার্থ কুটনৈতিক প্রক্রিয়ার পর বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনকে দিয়ে ‘তিস্তা নদী মহা ব্যাবস্থাপনা এবং পুনর্বাসন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করার।
এমন ব্যয়বহুল প্রকল্পের জন্য বিশাল অর্থের যোগান দিতে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে $৯৮৩.২৭ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে, যা চীন প্রাথমিক ভাবে সবুজ সংকেত দিয়েছে বলে অসমর্থিত সূতে জানা যায়।
তিস্তার কারনে প্রতিবছর নদীর দুই পাশে বন্যা হচ্ছে যার কারনে নদীর দুই পাড়ে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে। আবার শুকনো মৌসুমে পানির তীব্র সঙ্কটে কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বিগত ৮ বছর যাবত পশ্চিম বঙ্গের মূখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তিব্র বিরোধীতায় আটকে আছে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি যার ফলে শুষ্ক মৌসুমীমে বাংলাদেশের অংশের নদী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র ভারতে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের কারণে।
জানা যায়, তিস্তার উজানে ভারতের সিকিমে তিনটির বেশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া পশ্চিম বঙ্গে দুটি সেচ প্রকল্প রয়েছে এই নদীর পানি সরিয়ে। তিস্তার ৩১৫ কিলোমিটারের ভেতর ১১৩ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। উজানে ভারতের বাঁধের জন্য শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না। এসব কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চীনকে দিয়ে এ প্রকল্পের কাজ করাতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ চীনের অর্থায়নে এবং সহায়তায় যেই প্রকল্প নিচ্ছে এতে বন্যাও নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে সেই সাথে শীত মৌসুমে পানির অভাব আর থাকবে না।
তিস্তা মহা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা:-
১. তিস্তা নদীর দুই পাড় মিলিয়ে ২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট উঁচু গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
২. বাঁধের দুই পাশে থাকবে প্রশস্ত রিভার ড্রাইভ রোড।
৩. নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হবে হোটেল, রেষ্টুরেন্ট।
৪. নদীর গভীরতা হ্রাস পেয়ে প্রশস্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই নদী গভীর করে খনন করা হবে।
৫. আর নদীর প্রশস্ততা এখন কোথাও ৮ কি:মি: কোথাও ১২ কি:মি:। শুস্কমৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে দেখা দেয় মরুভূমির মত। তাই এটাকে কমিয়ে ২ কি:মি: করা হবে।
৬. নদী থেকে প্রায় ৮৮০ বর্গকি:মি: জমি উদ্ধার হবে। (গড় ১০ কি:মি: প্রশস্ততা ধরা হয়েছে। তার থেকে ২ কি:মি: নদী রেখে ৮ কি:মি: উদ্ধারকৃত জমি হিসাবে ১১০ কি:মি: নদীতে ৮৮০ কি:মি: এর মত হয়)
৭. উদ্ধারকৃত জমিতে ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হবে।
৮. উদ্ধারকৃত নদী পাড়ে থাকবে ইকোনমি জোন।
৯. নদী খনন করে গভীরতা বাড়িয়ে চালু করা হবে নৌ রুট।
১০. নতুন জমিতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বসবাসের জন্য আবাসিক এলাকা তৈরি হবে।
১১. উদ্ধারকৃত জমি ভুমিহীনদের মাঝে কৃষি কাজের জন্য বিতরণ করা হবে।
১২. ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন বাংলাদেশ বন্যা থেকে রক্ষা পাবে , অন্যদিকে তিস্তা পারের কৃষকগণ তাদের জমি চাষ করতে সুবিধা হবে । দূর হবে তাদের দীর্ঘ দিনের থাকা পানির সমস্যা । লাভবান হবে বাংলাদেশ ।