মহানবী (সাঃ) কে কার্টুন কটুক্তি ও অবমাননায় সারা মুসলিম বিশ্ব এখন প্রতিবাদে মুখর। পাকিস্তান তাদের রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মধ্যে চলছে তুমুল টাসপোড়ন। উভয় দেশ একে অপরের লেবেল যুক্ত পণ্য ক্রয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশ ফ্রান্সের চলমান সংকট নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ধর্ম নিয়ে মন্তব্যকে নিন্দা জানাবে না সরকার এবং অন্যদিকে চলমান ফ্রান্সবিরোধী সমাবেশ নিয়ে সহিষ্ণু আচরণ প্রদর্শন করা হবে। চলমান অস্থিরতায় কোনও পক্ষ নিবে না বাংলাদেশ।
এদিকে বাংলাদেশে ফ্রান্সকে নিয়ে চলমান অস্থিরতা যেন হিংসাত্মক পর্যায়ে না পৌঁছে সেদিকে সরকার সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ফ্রেঞ্চ দূতাবাস, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ও ফ্রেঞ্চ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া দেশে অবস্থিত ফ্রেঞ্চ নাগরিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে-বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বুধবার (২৮ অক্টোবর) জানান।
তবে বাংলাদেশ সরকার ফ্রান্সের চলমান ইস্যু নিয়ে কাউকে মতপ্রকাশে বাঁধা দেবে না বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান। কোন শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সরকার কোন ভূমিকাও নেবে না।
এদিকে, বায়তুল মোকাররম এলাকায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করা নিয়ে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ফ্রান্সবিরোধী ভিডিও প্রকাশ করে ইউটিউবে প্রকাশ করছে যা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে নিতে হবে। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আপত্তি আছে ইউরোপিয়ান দেশগুলোর।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টিকে আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে দেখছি এবং কোনও ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের কাছে অগ্রাধিকার বিষয় নয়।’
উল্লেখ্য যে, ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় ‘ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের’ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের প্রতিবাদে বাংলাদেশে আলেমদের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বুধবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ করেন কওমি মাদ্রাসার আলেম-শিক্ষার্থীরা এবং বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠন। চরমোনাই অনুসারী ইসলামী আন্দোলন ঢাকায় ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বাধাতে ভেস্তে যায়।
এদিকে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে ফ্রান্স বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে তাদের নাগরিকদের সাবধানে চলাফেরা করার জন্য উপদেশ দিয়েছে।
‘ফ্রান্স ব্যঙ্গচিত্র দেখানো বন্ধ করবে না এবং ফ্রান্স সরকার কোন ধরনের ক্ষমা চাবে না’ বলার প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ক, সৌদি আরবসহ অন্যান্য অনেক মুসলিম দেশ এই ঘটনার জন্য নিন্দা জানিয়েছে এবং ফ্রেঞ্চ পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ তাদের শপিং মল ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর গুলো থেকে পণ্য সরিয়ে নিয়েছে।