ঢাকাবুধবার , ১৯ আগস্ট ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টলস্টয়ের থ্রি কোয়েশ্চনস: যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের জীবনবোধকে সজাগ করে

অনলাইন ডেস্ক
আগস্ট ১৯, ২০২০ ৫:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দোপেয়ে দৈত্যরা প্রতিনিয়ত খুঁজে ফেরে জীবনের অর্থ। থামার যো নেই কারোরই। আমাদের জীবনকে একটি চলমান সাইকেলের সাথে তুলনা করেছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত আলবার্ট আইনস্টাইন। যে সাইকেল থেমে গেলেই ফুরিয়ে যাবে তার চলার শক্তি। সাইকেলের প্যাডেল মেরে তাই প্রতিনিয়ত টিকে থাকতে হয় আমাদের।

“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি

কেমনে আসে যায়?

তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি

দিতাম পাখির পায়ে”

লালন ফকিরের বিখ্যাত গানের মতই যেন আমাদের চিন্তা। আমাদের চিন্তার ক্ষেত্র যেন এক বর্ণিল ক্যানভাস। বিভিন্ন সময়ে আমাদের চিন্তায় আসে বৈচিত্র্যে ভরপুর সব জীবনবোধ। জীবনের ক্যানভাসে আঁকি সব কাজের রেখা। যেখানে সফলতার প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে বসে থাকে আমাদের ভবিষ্যৎ।

কিন্তু কীসে আমাদের কল্যাণ হবে? কখন কী করলে আমাদের সব ইতিবাচক চিন্তাগুলো স্বাধীনভাবে উড়ে চলার পাখা পাবে? কাকে বেশি সময় দেব? আমার কাছে কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? বিক্ষিপ্তভাবে জীবনের মানে না খুঁজে আমাদের উচিত এসবের উত্তর খুঁজে বের করা। কেননা এসব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত হবে সফলতায় পরিপূর্ণ।

জীবন নিয়ে এমনই তিনটি প্রশ্ন খুঁজে বের করেছেন রুশ সাহিত্যিক লিও টলস্টয়। ‘থ্রি কোয়েশ্চনস’ বা ‘তিনটি প্রশ্ন’ শিরোনামের একটি গল্প লেখেন তিনি। যা ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত হয়। এখানেই কাহিনীকে ধারণ করে জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর বের করেন সৃষ্টিশীল এই সাহিত্যিক।

রাশিয়া তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন সাহিত্যিক লিও টলস্টয়। তার সাহিত্যের ঝুলিতে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই সাহিত্যকর্ম ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ এবং ‘আন্না কারেনিনা’। যিনি তার লেখায় তুলে ধরতেন জীবনবোধের চিত্র। দেখাতেন তৎকালীন সমাজের চিত্র। তা সমসাময়িক হয়ে টিকে আছে আজও।

তার ‘তিনটি প্রশ্ন’ গল্পেও তিনি মানবজীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে আলোকপাত করেছেন। খুঁজে বের করেছেন তিনটি প্রশ্নের উত্তর।

প্রথমে জেনে নেয়া যাক প্রশ্ন তিনটি কী কী?

১) কোনো কাজ শুরু করার উপযুক্ত সময় কোনটি?

২) কোন ব্যক্তিটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ? কার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে? কাকে পরিহার করতে হবে?

৩) সর্বোপরি কোন কাজটি করা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

উপরোক্ত তিনটি প্রশ্ন এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে করে সহজেই বুঝতে পারা যায় যে এগুলোর উত্তরই জীবনের পথ চলায় পাথেয় হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ছোট ছোট সফলতাই তো বড় সফলতার পথ বের করে দেয়। সফলতার পথের কাঁটা দূর করে দেয়। এই তিনটি প্রশ্নের ধরন দেখে আমরা সাহিত্যিক টলস্টয়ের দার্শনিক চিন্তাভাবনার গভীরতার সাথে পরিচিত হই।

কোনো এক রাজার মাথায় উপরোক্ত তিনটি প্রশ্নের উদয় হলো। এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলে তিনি তার রাজকার্য সঠিকভাবে সঠিক সময়ে সম্পন্ন করতে পারতেন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যে ব্যক্তি জানাতে পারবেন, তাকে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিলেন সেই রাজা।

অনেক পণ্ডিত রাজাকে তাদের মতামত জানালেন। অনেকেই বললেন, কাজ শুরু করার জন্য অনেকদিন আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। অনেকে বললেন, এজন্য গঠন করতে হবে বিশেষ একটি উপদেষ্টা পরিষদ। সভাসদদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করার কথা বলেন তারা। কেউ কেউ বলেন, জাদুকরদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে। কেননা তারাই ভবিষ্যৎ জানে।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে এলো সভাসদদের কথা, চিকিৎসকের কথা এবং সৈন্যদের কথা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে পরামর্শ দেয়া হলো ধর্মচর্চা, বিজ্ঞানচর্চা এবং যুদ্ধক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেয়াকে। কিন্তু রাজার মনঃপুত উত্তর পেলেন না তিনি। তাই ছুটে গেলেন রাজ্যের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট।

রাজাকে চেনেন না সেই ব্যক্তি। বনের মধ্যে তার আবাসের সামনের জমিতে কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ছিলেন তিনি। রাজা তার কাছে গিয়ে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। কিন্তু উত্তরে জ্ঞানী ব্যক্তিটি চুপ করে একমনে কাজ করতে থাকেন। মনোযোগ দিয়ে প্রশ্ন শুনে উত্তরে কিছুই বলেন না তিনি। রাজা তখন জ্ঞানী ব্যক্তিটির মাটি কাটায় সাহায্য করেন। কেননা বৃদ্ধ ব্যক্তিটির মাটি কাটতে কষ্ট হচ্ছিলো। রাজা মাটি কাটতে কাটতে অপেক্ষা করেন প্রশ্নের উত্তরের।

এরই মাঝে এক লোক গুরুতর জখম হয়ে তাদের কাছে এসে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান। রাজা তখন তার সেবা-শুশ্রূষা করে তাকে সুস্থ্য করেন। কিন্তু জ্ঞান ফিরে এলে লোকটি জানায়, তিনি রাজাকেই খুন করতে এসেছিলেন। কিন্তু রাজার প্রহরী তাকে চিনতে পেরে তাকে জখম করে। এখন সে রাজার আচরণ ও ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তার সেবায় নিজেকে সঁপে দিতে চায়। রাজাও তার সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে ফেলেন।

বারবার প্রশ্ন করেও উত্তর না পেয়ে রাজা এবার ফিরে যাওয়ার মনস্থির করেন। কিন্তু শেষবারের মতো সেই জ্ঞানী লোকটির কাছে সেই প্রশ্ন তিনটির উত্তর জানতে চান তিনি। জ্ঞানী ব্যক্তিটি তাকে জানান, এতক্ষণে রাজার নিজেরই জেনে ফেলার কথা সেই প্রশ্ন তিনটির উত্তর। তার কাজের ভিতরেই লুক্কায়িত আছে সেসব উত্তর।

তখন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রথম প্রশ্নের উত্তরের দিকে ইঙ্গিত করে জ্ঞানী লোকটি বলেন, রাজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিলো যখন তিনি মাটি খুঁড়ছিলেন তখনকার সময়টি। কারণ, যদি রাজা প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে অপেক্ষা না করে ফিরে যেতেন, তাহলে পথে সেই জখম হওয়া লোকটির হাতে তিনি কতল হতেন। আবার লোকটি জখম হয়ে তার নিকটে এলে রাজার গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিলো লোকটিকে সেবা দেয়ার সময়টি। তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন তার সাথে চলমান সময়কে। অর্থাৎ বর্তমানকে গুরুত্ব দেন তিনি। জ্ঞানী ব্যক্তিটি তখনই জানান, বর্তমানই আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে জ্ঞানী ব্যক্তিটি বলেন, যখন রাজা শুধু জ্ঞানী ব্যক্তির নিকটে ছিলেন, তখন জ্ঞানী ব্যক্তিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিলো রাজার। রাজা সেটি করেছেন। জ্ঞানী ব্যক্তি তখন তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে পরিগণিত হয়। আবার যখন জখম হওয়া লোকটি রাজার নিকটে আসে, তখন রাজার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন সেই লোকটি। অর্থাৎ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমাদের আশেপাশে থাকা মানুষজনই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হওয়া উচিত।

তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর জানাতে গিয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি বলেন, রাজার উচিত ছিলো তার আশেপাশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের কল্যাণ করা। এটিই আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাজা যখন দেখলেন জ্ঞানী ব্যক্তিটি মাটি খুঁড়ছিলেন, তখন রাজা তার মাটি কাটার কাজে সাহায্য করেন। আবার যখন জখম হওয়া লোকটি তার নিকটে আসে, তখন রাজা সেই লোকটির পরিচর্যা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন। সেটিই ছিলো সেসময় তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

জ্ঞানী লোকটি বললেন, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে আমাদের আশেপাশে থাকা লোকদের কল্যাণ করা।

আসলেই জ্ঞানীর ভাবাদর্শ অনেকটাই আমাদের জীবনবোধের জটিল কিছু অধ্যায়ের ব্যাখ্যা দেয়। ভবিষ্যতে কী হবে, আমরা কেউই জানি না। নশ্বর পৃথিবী থেকে যেকোনো মুহূর্তে আমরা যে কেউ বিদায় নিতে পারি। ভবিষ্যতে কী হবে তা ভেবে কোনো লাভ কি হবে? এর পরিবর্তে আমরা চলমান বর্তমানকে বেশি গুরুত্ব দিলে ভবিষ্যৎ তো এমনিতেই সুন্দর হতে বাধ্য। কেননা ভবিষ্যৎ বলতে দৃশ্যত কিছুই নেই। যা আছে, সবই তো বর্তমান।

সেই বর্তমানে আমাদের আশেপাশে থাকা লোকদের বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত আমাদের। কেননা তারাই বর্তমানে আমাদের সঙ্গী, আমাদের বর্তমান পথ চলার সাথী। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে তাদের কল্যাণ করা। এভাবে একজন আরেকজনের কল্যাণের চিন্তা করলে পৃথিবীতে আর টিকে থাকবে না হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা। আরেকজনের ভালো কোনো সংবাদে আমরা তাদের চেয়েও বেশি খুশি হবো। লিও টলস্টয় হয়তো তার এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমাদের মানবজাতির জন্য এই মহান বার্তাটি রেখে গেছেন।

মূল লেখকঃ সাইরুল ইসলাম।
সৌজ‌ন্যেঃ Roar Media বাংলা।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।