সোমবার ১০ই অগাস্ট বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায় প্রবল আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করল লেবানন সরকার। সরকারের পদত্যাগের ঘোষনা দেন প্রধানমন্ত্রী হাসানা দিয়াব। বিকেলে দেশটির কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগের পর সংসদ সদস্যরাও পদত্যাগ করতে শুরু করেন।
বৈরুতে বিস্ফোরণের জেরে লাখ লাখ বিক্ষোভকারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেন, সরকারের বেশিরভাগই দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের নিয়ে বেশিদূর চলা অসম্ভব। তাই সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।
টেলিভিশনে আজ সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন আমি আজকে এই সরকারের পদত্যাগ ঘোষণা করছি। ঈশ্বর লেবাননকে রক্ষা করুন,” তিনি সর্বশেষ বাক্যটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন।দিয়াব মারাত্মক বিস্ফোরণের জন্য দায়ীদের বিচার করার আহ্বান জানিয়েছেন।তাঁর মন্ত্রিসভার সব সদস্যও পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে দেশটির সরকার ভেঙে গেল।
রাজধানী বৈরুতের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা, অর্থনৈতিক সঙ্কট, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার আগে আজ পদত্যাগ করেন দেশটির বিচারমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী ও পরিবেশমন্ত্রী। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে অনড় ছিলেন। পরে স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় পদত্যাগের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব প্রেসিডেন্টের কাছে মন্ত্রিসভার সব সদস্যের স্বাক্ষর করা পদত্যাগ পত্র জমা দেন বলে নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান।
একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনা করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
লেবানন গত এক দশক ধরে চরম অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জড়িত। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের থাবায়ও নাজেহাল অবস্থা। মুদ্রার মান তলানিতে ঠেকায় বহু বিদেশি শ্রমিক লেবানন ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘদিনের সমস্যার সঙ্গে বৈরুতের বিস্ফোরণ সঙ্কট আরও প্রবল করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে রাজপথে বিক্ষোভ করছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভ দমাতে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় রণক্ষেত্র রাজধানী। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার মানুষ।
গেল ৪ আগস্ট লেবাননের বন্দরের গুদামে বিস্ফোরণে ২৪০ জনের মতো প্রাণ হারিয়েছেন। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক। আহত হয়েছেন অনেকে।
পদত্যাগের আগে দিয়াবের সরকার নেওয়া শেষ সিদ্ধান্তটি ছিল বিস্ফোরণের ঘটনাটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে প্রেরণ করা, যা লেবাননের জাতীয় সুরক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা অপরাধকে লঙ্ঘনকারী অপরাধ পরিচালিত করে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল হ’ল লেবাননের শীর্ষ বিচার বিভাগীয় সংস্থা।
এর আগে সোমবার এক বিচারক দেশের সুরক্ষা সংস্থাগুলির প্রধানদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত জাতীয় নিউজ এজেন্সি অনুসারে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান মেজর জেনারেল টনি সালিবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ঘাসন এল খুরি। এটি আর কোনও বিবরণ দেয়নি, তবে অন্যান্য জেনারেলদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।