বৃহস্পতিবার বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা জানতামই না গুম কাকে বলে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, এক লাখের ওপরে মামলা। হাজারো নেতাকর্মী গুম হয়েছে, খুন হয়েছে। ইলিয়াস আলীর মতো নেতা, চৌধুরী আলমের মতো নেতা, লাকসামের পারভেজের মতো নেতাসহ বহু নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছেন। তাদের কোনো খোঁজ নেই। আমরা এই পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। আমরা জানতামই না গুম কাকে বলে। আজকে আমরা আমাদের নেতাদেরকে গুম হয়ে যেতে দেখেছি।
সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করে দেশে একনায়কতন্ত্র চালু করেছে অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন, টানা ক্ষমতায় থাকার জন্য শুধু বন্দুক-পিস্তলের জোরে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা দখল করে করেছে। একতরফা শাসন ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য তারা এটা করেছে। আজকে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রবিহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি খুন করছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে এবং মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ অবস্থা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। আজকে প্রত্যেকটি মানুষ এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আজকে এই স্মরণসভায় ব্যারিস্টার সালাম তালুকদারকে অনুসরণ করে আমরা সবাই সক্রিয় হবো। তার শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আমরা অবশ্যই জয়ী হবো।’
তিনি বলেন, ‘কোনোদিন আমরা কল্পনাই করতে পারিনি যে এই নির্বাচন কমিশন দেশে এমন ভয়াবহ ধরনের নির্বাচন করবে। তিন তিনটি নির্বাচনই তারা একই ধরনের নির্বাচন করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা একটা হাইব্রিড সরকার। তারা নির্বাচনকে ব্যবহার করবে তাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য এবং করছেও তাই। তারা পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, আদালতসহ সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে বলেছে, আমরা তো নির্বাচিত সরকার।’
খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। এটা তো একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। যে নেত্রী স্বাধীনতার পতাকা, গণতন্ত্রের পতাকাকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন, জনগণ তার পেছনে ছুটেছে— সেই নেত্রীকে তারা আটক করে রেখেছে। এর একটি মাত্র কারণ— তিনি যদি বাইরে থাকেন, তাহলে এই জনগণকে আটকে রাখা যাবে না। সেজন্য তারা আজকে তাকে আটকে রেখেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরকম একটি পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমরা লড়াই করছি। আমরা কখনো সরে যাইনি। আমরা এর মধ্যে সংগ্রাম করছি, আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য কাজ করছি। আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছি, বিভক্ত হতে দিইনি।’
‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে আমরা সক্ষম হবো, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো,
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের পরিচালনায় আলোচনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি নেতা সিরাজুল হক, নিলোফার চৌধুরী মনি, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, প্রয়াত নেতার স্ত্রী মাহমুদা সালাম, তার মেয়ে সালিমা বেগম, স্বামী মাহমুদুল হাসান, ভাতিজী সাদিয়া হক, স্মৃতি সংসদের সুজাত আলী, শামসুজ্জামান মেহেদি প্রমুখ।
দৈনিক অপরাজিত বাংলা