ধর্মীয় স্থান পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে গন্য করা হয়, হউক সেটা মসজিদ, মন্দির, গীর্জা। কিন্তু এই ধর্মীয় স্থানগুলো যখন কোন ভূমি লোভাতুরের দৃষ্টিতে পরে তখন তারা হয় সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানব। সমাজের এই ভূমি দস্যুদের কাছে কি খাস জমি কি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কোনটারই পার্থক্য নাই। কিন্তু বিষ্মিত হতে হয় যখন বিবেকহীন বিকারগ্রস্থ কিছু মানুষ এই সব স্থানকে গ্রাস করে নিজেদের রুটি রুজি করে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামস্থ উত্তর হালিশহর বি-ব্লক নতুন সাইটের ৫ নং রোডে কিছু ভূমিদস্যুদের একটি মসজিদকে নিয়ে গড়ে উঠেছে কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
ঘটনা প্রবাহ-১
হালিশহরের বি-ব্লকস্থ বর্তমান নাম রুটিওয়ালা বাড়ী যা কিনা ছিলো নতুন আর্টিলারী ক্যাম্পের আওতায় যা ১৯৮১ সালে আর্টিলারী ক্যাম্পের পরিধি বাড়ানোর জন্য ওখানে বসবাসকরা ৩৬০টি পরিবারকে স্থানান্তর করা হয় বি-ব্লক নতুন সাইটে এবং এ স্থানের নামকরনও করা হয় রুটিওয়ালা বাড়ি। তৎকালীন সময়ে একটি পুকুর, স্কুল ও মসজিদ করবার কথা থাকলেও যা হয়ে উঠেনি আজ অব্দি। তার মাঝে বিশাল একটি দিঘী ভূমি দস্যুদের নজরে পরে বিলীন হয়ে যায় যা বর্তমানে মোহনা আবাসিক এলাকা নামে গড়ে উঠে। কালের বিবর্তনে এলাকার উন্নয়ন হলেও পেলো না এই এলাকার মানুষ মসজিদ ও স্কুল। পরবর্তিতে ১৯৯৯ সালে এলাকার জনসাধারন ৫নং রোডের ২ নং লেইনে হাউজিংয়ের ৫ নং পরিত্যাক্ত প্লটিতে বাঁশ এবং টিন দিয়ে একটি অস্থায়ী মসজিদ নির্মান করে যেখানে দীর্ঘ ২৪ বছর এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নামাজ পড়ে আসছেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে মসজিদ প্লটির উপর নজর পরে বিএনপির দুই নেতা জামিলুর রহমান এবং মিজানের। তখন থেকে তারা প্লটটি অবৈধ দখলে নেয়ার জন্য বহু বার চেষ্টা করে কিন্তু জনগনের প্রতিরোধের মুখে সফল হতে পারেনি।
ঘটনা প্রবাহ-২
গত ৩০-০৩-২০২৪ ইং তারিখে রাত আনুমানিক ১১টায় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার এক সাংবাদিক এম.এ কাউসার তার বড় ভাই মিজান এবং জামিলুর রহমান প্রকাশ গরু জামাল সহ বহিরাগত ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে মসজিদ স্থাপনাটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এলাকাবাসী খবর পেয়ে প্রশাসনকে অবগত করলে পুলিশ সহ এলাকার জনগন মসজিদ স্থানে গিয়ে উপস্থিত হয় এবং কাউসার, মিজান ও জামিলুর রহমান সহ অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের ঘেড়াও করে ফেলে। এতে পুলিশের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের বাকবিতন্ডা শুরু হয়। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রনের বাহিরে না যায় পুলিশ কাউসার, মিজান ও জামালকে জনগনের ঘেরাও অবস্থান থেকে বের করে থানায় নিয়ে যান।
ঘটনা প্রবাহ-৩
উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ জনগন পরদিন ঝাড়ু মিছিল নিয়ে থানা অভিমুখে রওয়ানা হয় এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। এই ঘটনার পর থেকেই সাংবাদিক কাউসার যুগান্তর পত্রিকাকে নিজ হাতিয়ার বানিয়ে তার আপন বড় ভাই মিজানের পক্ষ হয়ে এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের নামে কুৎসা, মিথ্যা ভূয়া সংবাদ পরিবেশন করতে থাকেন। আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি এই ঘটনার মূল উদঘাটন করতে গিয়ে উঠে আসে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য যা এতোদিন সবার অগোচেরে ছিলো।
সাংবাদিক কাউসার তারা ৪ ভাই। তারা জন্ম থেকে বেড়ে উঠে এ-ব্লক লেইন-২, রোড-৫ তার বাবার পৈত্রিক ভিটায়। তারা বাবা মোঃ খালেক ছিলেন পুলিশের একজন হাবিলদার। আমাদের প্রতিনিধি ঐ এলাকার নামপ্রকাশ না করা শর্তে বেশকিছু অধিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, কাউসারের বাবা জীবদ্দশায় উনার চার ছেলের অত্যাচারে তাদের দুষ্কর্মের কারণে এ-ব্লকের নিজ ভিটে বাড়ীটি বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ছেলেদের মারমুখী আচরণের কারণে তিনি ভিটে বাড়িটি বিক্রি করতে সফল হননি এবং মৃত্যুর আগ অবধি সন্তানদের কুকর্মের কারণে লজ্জায় বেশীর ভাগ সময় ঘরে অবস্থান করতেন। উনার প্রথম পুত্র মিজান এলাকায় নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, চাঁদাবাজী সহ ভূমি দখলের মতো বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িতে আছেন। অপর ছেলে কাউসার হালিশহর, পাহাড়তলী এলাকায় বিভিন্ন মেলায় লটারীর টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে এবং বিভিন্ন সময় নিরপরাধ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ উপার্জন করে যারা উজ্বল উদহারণ তার বাড়ির পাশে ‘দারুচিনি রেষ্টুরেন্ট’।
ছবি: সরকারী জায়গার উপর অবৈধভাবে তোলা কাউসারের ভাড়া দোকান।
আমাদের প্রতিবেদকের সরজমিন তদন্তে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ-ব্লক দারুচিনি রেষ্টুরেন্টে কাজ করা এক কর্মচারীর কাছ থেকে জানা যায়, “কাউসার খুব দূর্ত ও ঠগবাজ ধরনের লোক। বিভিন্ন সময় সে তার সাথের সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে রেষ্টুরেন্টে এসে বিল পরিশোধ না করে খেয়ে যেতো, একাধিকবার সে আমাদের মালিককে ভয় ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করেছে। একবার কাউসার আমাদের মালিককে ডেকে তার পরিচিত একজনের বাসায় নিয়ে সেখানে এক নারী পতিতার সাথে ছবি তোলার চেষ্টা করে কিন্তু আশেপাশের লোকজনের উপিস্থিতির কারনে সেবার তারা তাদের হীন কাজে সফল হতে পারেনি। কিন্তু এঘটনার পর তারা বিশাল অংকের অর্থ দাবী করতে থাকে। একসময় রেষ্টুরেন্ট মালিক তার ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।’
সরজমিন তদন্তে কাউসারের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাংবাদিক কাউসার কট্টর জামায়াতে ইসলামী মতাদর্শী। ২০০৯-২০১০ সালের দিকে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতেন। হালিশহর এ-ব্লক লায়লা ভবনের পাশে ইকোয়েডর নামে কোচিং সেন্টারটি ছিলো। জানা যায়, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার আড়ালে কোচিং সেন্টারটিতে চলতো তৎকালীন হালিশহর জামায়াতে ইসলামীর সকল কর্মকান্ড। ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে কুখ্যাত রাজাকার যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে কাউসার জামায়াতের নেতা কর্মীদের নিয়ে চট্টগ্রাম অলংকার মোড়ে প্রতিবাদ করতে গেলে জনগন তাদের ধরে গনধোলাই দেয়। এর পরপরই যার উক্ত কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কাউসার ও তার সহযোগীরা।
তার বাবার জীবদ্দশায় তাদের ভিটার চর্তুপাশের সরকারী রাস্তার জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দোকানপাট নির্মান করে ভাড়ায় দিয়ে আসছে। তার বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পদ নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পরে। এদিকে কাউসার পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পরে আরেকজনের বিবাহিত স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে বর্তমানে শাপলা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছে। কাউসারের ছোট ভাই এলাকার চিহ্নিত ছিচকে চোর যাকে পুলিশ বহুবার গ্রেফতার করেছে বলে এলাকাবাসী ও থানা সূত্রে জানা যায়। বর্তমানে এই ভাই তার পৈত্রিক ভিটায় অবস্থান করে বিভিন্ন অসামাজিক কার্মকান্ড করে আসছে।
তারা তিন ভাই দখলকৃত ভূমিতে গড়ে উঠা দোকান থেকে মাসিক ভাড়া এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ভাম্যমান ক্ষুদ্র ভ্যান গাড়ীতে করা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করে আসছে। তাদের এহেন কর্মকান্ড সম্পর্কে এলাকাবাসী ওয়াকীবহাল থাকলেও ভয় এবং আত্মসম্মানের কারনে মুখ খুলতে রাজি হননা কারন কাউসার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক হবার কারনে ইতিমধ্যে কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও তাদের বিপক্ষে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের হুমকী দিয়ে থাকে। এই ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলেনা বা প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।
বর্তমানে কাউসার তার সাংবাদিকতার আড়ালে ফইল্যারতলী বাজার, গোডাউন বাজার, চুনা ফ্যাক্টরীর মোড়, আই-ব্লক, নয়াবাজার বিশ্বরোডের ভ্যান গাড়ীতে ব্যবসায়ীদের থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমান চাঁদা আদায় করে আসছে। এছাড়া ছোটপোল ইট ভাটার পাশে রাতে বসা জুয়ার আসর থেকে প্রতি রাতে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা নিয়ে আসছে।
কাথিত সাংবাদিক এম.এ কাউসার অনেক সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে যুগান্তর পত্রিকাকে হাতিয়ার বানিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে আসছে। ভুক্তভুগীরা এই সন্ত্রাসী, জোচ্চুর, চাঁদাবাজ, মামলাবাজ কাউসার থেকে পরিত্রান চায়।