পত্রিকায় বিয়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এই প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে আটক করেছে সিআইডি।
সুন্দরী। চেহারায় আভিজাত্যের চাপ। দেখে মনে হতেই পারে তিনি বিদেশে থাকেন। নিজের এই সুদর্শনা চেহারাকে পুঁজি করেই বারবার পাত্র খুঁজেন। ‘প্রবাসী পাত্রীর জন্য পাত্র চাই’। এই শিরোনামে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকে, ‘প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি সন্তানহীন, ৩৭ বছর বয়সী, পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা, নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই।’
কখনও আমেরিকার। নানা পরিচয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করেন পাত্রদের। বিয়ে করে উন্নত দেশের বাসিন্দা হতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন পাত্ররা। সকল পাত্রকেই নানা প্রলোভন দেখিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন। বিদেশের মাটিতে তার বিপুল অর্থ সম্পদের প্রলোভন দেখান। জানান, ব্যবসাও রয়েছে তার। মূলত পাত্রীবেশী এই নারী একজন প্রতারক। তার নাম সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস। তার রয়েছে একটি চক্র। এই চক্রের মূল হোতা এই জান্নাত।
যোগাযোগের জন্য বারিধারা, গুলশানের মতো অভিজাত এলাকার ঠিকানা উল্লেখ করেন। কখনও তিনি কানাডার সিটেজন।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত এক দশক ধরেই প্রতারণা করে আসছিলো চক্রটি।
প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, কানাডিয়ান নাগরিক, ডিভোর্সি, সন্তানহীন পাত্রীর জন্য বিয়ের বিজ্ঞাপন। এরকম অনেক বহু বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞাপন দেয়ার পর আগ্রহী পাত্রের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ হয়। অভিজাত হোটেলে দেখা হয়। এরপরই ফেলা হয় প্রতারণা ফাঁদে।
সম্মেলনে শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই’- জাতীয় দৈনিকে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস হলেও প্রতারক জান্নাতের কথাবার্তা ও স্মার্টনেস দেখে কানাডা প্রবাসী ভেবেই সবাই ভুল করতেন। তার ফাঁদে পড়ে কোটি টাকা খোয়া গেছে অনেকের। গত ১১ বছর ধরে সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস পত্রিকায় এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে এভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন।’
অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে জান্নাতুল ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযানে তার কাছ থেকে ফাঁদে পা দেয়া ভুক্তভোগীদের অনেক পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, তিনটি মেমরি কার্ড, সাতটি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করা হয়। সাদিয়ার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।