লকডাউন শেষ হলেও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এখন যায়নি, এমন সতর্কবার্তা দিয়ে ভারতের জনগণকে স্বাস্থ্যবিধিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মঙ্গলবার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মোদি বলেন: উৎসবের সময় আনন্দের সময়, খুশির সময়। কিন্তু সেই খুশিতে সতর্কতা সামান্যতম কমানো ঠিক হবে না। তা হলে এই খুশি দুঃখে পরিণত হতে পারে। এসময় বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া, নূন্যতম দু’গজ দূরত্ব বজিয়ে রেখে চলাচল করাসহ মাস্ক পরার বিষয়ে সকলকে অভ্যস্থতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
যতক্ষণ পর্যন্ত টিকা আবিষ্কার না হচ্ছে ততোক্ষণ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধিতে কোন রকম শিথিলতা না আনার আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেন: যতক্ষণ টিকা আবিষ্কার না হচ্ছে, ততোক্ষণ ঢিলে দেয়া যাবে না। অনেকগুলো টিকা নিয়ে আমাদের দেশে কাজ চলছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা টিকা আবিষ্কারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের আরও অনেক দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা নিয়ে কাজ চলছে। টিকা না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধে কোন ধরনের শিথিলতা আনা যাবে না।
সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং মৃত্যুর হারে তৃতীয় দেশ ভারত হওয়া সত্ত্বেও তার সরকারকে করোনা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের থেকে সফল বলে দাবি করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
ভারতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর জনতার কারফিউ-লকডাউনসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশ পেরিয়ে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার হওয়ার বিষয়টি তিনি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন।
করোনা মহামারি ভারতে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রতিক সময়ে কমে আসায় দেশবাসীর সচেতনতা বিশেষভাবে কার্যকারী ফল রেখেছে বলে মন্তব্য করে মোদি। দূর্গা পূজার সময়ে বিধি-নিষেধ মানার ক্ষেত্রে নূন্যতম শিথিলতা না দেখানোর আহ্বান জানান।
এরআগে, দুপুরে কোন পূর্বাভাস ছাড়াই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা নরেন্দ্র মোদি। তার এ ঘোষণার পর নানামুখি আলোচনা শুরু হয় ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গণে। কেননা, মোদি তার ভাষণের বিষয়স্তু নিয়ে সামান্যতম ইঙ্গিতও দেননি টুইট বার্তায়।
ভারতের নানা গণমাধ্যমে আলোচনা হতে থাকে, মোদির ভাষণের বিষয়বস্তু। কোন কোন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় এবং করোনাকালীন বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যায় সে সংক্রান্ত নির্দেশনা থাকবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে।
আবার সার্বজনীন দুর্গাোৎসবকে সামনে রেখে লাগামহীন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের লাগাম টেনে ধরা নিয়ে পরিকল্পনা এবং উৎসবের এসময়টাতে যেন অবাধ চলাচলে করোনার প্রকোপ বেড়ে না যায়, সে বিষয়টি সামনে রেখে সরকারের বিধি-নির্দেশনার ঘোষণা আসতে পারে মোদির ভাষণে।
ভারতে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শৃঙ্খল রুখতে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে প্রথম বার ২২ মার্চ জনতা কারফিউর ডাক দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তারপর ২৪ মার্চের ভাষণে পরের দিন থেকে ভারত জুড়ে লকডাউনের ঘোষণা দেন। ধাপে ধাপে লকডাউন বাড়িয়ে মোট ৬৮ দিন লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছিলো বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির সরকার। এরপর পর্যায়ক্রমে অর্থনৈতিকসহ সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মোদি।এসময়ের মধ্যে কখন আলোক প্রজ্জ্বলন, থালা-বাসন বাজিয়ে সচেতনতা তৈরির মধ্যে কর্মসূচি দিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় আলোচনায় আসেন ভারত সরকার প্রধান।
মোদি প্রশাসনের করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে প্রস্তুতি ঘাটতি সমালোচনায় এসেছে পরবর্তি সময়গুলোতে। যুক্তরাষ্ট্রের পর সারা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ভারতে। দেশটিতে ৭৬ লাখেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৯৬ জন মানুষ। যদিও বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুহার শেষ দিনগুলোতে কমে এসেছে। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন সাড়ে সাত হাজারের কিছু বেশি মানুষ (৭৬৭৮) আর মারা গেছেন ৬০ জন।