ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১২ নভেম্বর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হাটহাজারী ফটিকছড়িতে মাদ্রাসা ও মন্দির পাশাপাশিঃ শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির দৃষ্ঠান্ত বহন করছে।

ইউনুস মিয়া, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।
নভেম্বর ১২, ২০২০ ৯:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও বৃহত্তর ফটিকছড়িতে মাদ্রাসা-মসজিদের সাথে মন্দির লাগোয়া থাকায় এখানে হিন্দু-মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বজায় আছে। যে সস্প্রীতি দেশে একটি দৃষ্ঠান্ত বিদ্যমান।

মুসলিম সম্প্রদায়ের ১’শ ২০ বছরের পুরানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ইসলামী কওমি আঁতুড়ঘর হাটহাজারী মাদ্রাসা। যার প্রধান জামে মসজিদের মাত্র ১০মিটারের মধ্যেই হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রী শ্রী সীতাকালী মায়ের মন্দির। এটাও শত বছরের পুরানো মন্দির। মসজিদ-মন্দিরের পাশাপাশি এই প্রতিচ্ছবিটিই বলে দেয়— বাংলাদেশের মুসলমানরা কতটা সুন্দর সহনশীল জাতি এবং কত বেশি উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে চলেন।

হাটহাজারী বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে রয়েছে একাধিক মসজিদ ও দেশের আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়।

১’শ২০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসার সীমানা দেয়ালের সঙ্গে গড়ে উঠেছে সনাতন ধর্মের কালীমন্দির। এক’শ বছরেরও আগে কয়েকজন জমিদার শ্রী শ্রী সীতাকালী নামে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে দুই ধর্মের অনুসারীরা সহঅবস্থানে থেকে যার যার মতো করে ধর্মীর আচার-অনুষ্ঠান পালন করছেন। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে এ নিয়ে কারও মধ্যে কোনো বৈরী অবস্থা তৈরি হয়নি। বাবরি মসজিদ ভাঙা, কিংবা গুজরাটের দাঙার রেশ, কিংবা হালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও— এখানে ছিল ব্যতিক্রমী চিত্র।

মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ১’শ২০ বছরে হিন্দু সম্প্রদায় ও কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ইতিহাস নেই। মন্দিরকে ঘিরে হিন্দুদের অনেক দোকানপাট আছে। মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা সেসব দোকানপাট থেকেই নিত্য বাজার-সদাই করে থাকেন।

হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনা বিভাগের প্যানেল মুহতামিম আল্লামা শেখ আহমদ বলেন, কখনো হাটহাজারী মাদ্রাসার কেউ, কিংবা আশপাশের কোনো মুসলমান হিন্দুদের পূজা বা প্রার্থনার সময় ডিস্টার্ব করেনি। বরং আমারা সব সময় তাদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করেছি।মাদ্রাসা ও মন্দির পাশাপাশি অবস্থান করাটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মাদ্রাসা মসজিদে নামাজের সময় চলে মুয়াজ্জিনের আজানের প্রস্তুতি। ঠিক একই সময় লাগুয়া মন্দিরের পুরোহিতও ব্যস্ত থাকেন পূজার প্রস্তুতি নিয়ে। মুয়াজ্জিন-পুরোহিত একই জায়গায় একই সময় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের আরাধনার প্রস্তুতি নিলেও কেউ কারও প্রার্থনার ব্যাঘাত ঘটান না কখনো।

এ কারণে হাটহাজারীতে মুসলমানদের শীর্ষ মাদ্রাসা ও ‘শ্রী শ্রী সীতাকালী মন্দির’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছেন স্থানীয়রা।

হাটহাজারী শ্রী শ্রী সীতাকালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃত বিভাগের সভাপতি ডক্টর শিপক নাথ বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা ও মন্দিরের অবস্থান পাশাপাশি হলেও কখনো হামলা কিংবা ঢিল ছোড়া-ছুড়ির মতো ঘটনাও ঘটেনি। বরং সব সময় তাদের মধ্যে সহযোগিতামূলক আচরণ দেখেছি।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সব সময় মন্দিরের ব্যাপারে আন্তরিক। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়ও একে-অপরের ওপর হামলা তো দূরে থাক, উল্টো মাদ্রাসা ছাত্ররা পাহারা দিয়ে মন্দিরকে রক্ষা করেছেন। শত বছরের অধিক সময় ধরে ভিন্ন ধর্মের দুটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি থেকে যার যার মতো করে ধর্মীয় রীতি পালন করছে।

একই ভাবে ফটিকছড়িতে নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসা মসজিদ ও স্থানীয় বৌদ্ধ মন্দিরের দূরত্ব ৪ মিটার । এখানেও ঠিক একই ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে ধর্মীয় কার্যাদী পালন করা হচ্ছে উভয় সম্প্রদায়।

এসব কারণেই হাটহাজারী মাদ্রাসা ও মন্দির এবং নানুপুর মাদ্রাসা মসজিদ ও বৌদ্ধ মন্দির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।