করোনা মহামারি ও দুর্যোগের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষের কাছে গিয়ে সেবা দেয়ায় দেশের মানুষের দুর্ভোগ কমেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, করোনায় মানুষের সেবা দিতে গিয়ে ৬১ জেলায় ৫২২ নেতা-কর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন।
শনিবার (০৩ অক্টোবর) সকালে দীর্ঘ সাত মাস পর অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে এবার সীমিত পরিসরে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হলো গুরুত্বপূর্ণ এ সভা। সভার শুরুতেই শেখ হাসিনা মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশ সামলানোর বিভিন্ন পরিস্থিতি উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, ‘শুধু করোনাই নয়; এর মধ্যেই বাংলাদেশকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে। সবমিলিয়ে দেশের মানুষের সার্বিক অবস্থা খুবই দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে পড়েছিল।’নেতাকর্মীরা নির্দেশ মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলা উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রশাসনকে সাথে নিয়ে ধান কাটা থেকে শুরু করে করোনায় মৃতদের লাশ দাফন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের সবকটি প্রতিষ্ঠান খুবই আন্তরিকতা নিয়ে এবার কাজ করেছে। সবাই নির্দেশ মতো কাজ করেছে। কেউ কখনো পিছপা হয় নি কোনো কাজে। কেননা, এভাবে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার দৃষ্টান্ত দেশে কমই রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই, মানুষ এই সহযোগিতাগুলো পেয়েছে। এখানে যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকতো, তাহলে কত যে মানুষ মারা যেত, কী যে দুরবস্থা মানুষের হতো তা ভাষায় বলা যাবে না। যদিও আমরা কথা শুনি, ভাষণ শুনি! অনেকেই অনেক কথা বলেন। আবার আমরা যেগুলো করে ফেলি বা যেসব নির্দেশনা দেই সেগুলো নিয়েও অনেকে উপদেশও দেন। যদিও আমরা সেগুলো করেছি।
করোনার কারণে সারাবিশ্বেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কিন্তু স্থবির। সেক্ষেত্রে অর্থনীতি যেন থেমে না যায় সরকার ও দলের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘বাজেট দেয়ার পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেকটা স্তরের মানুষের জন্য প্রণোদনা দিয়েছি।’ কৃষক-গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত আমরা সাহায্য সহযোগিতা করেছি। তালিকা করে করে যথাযথভাবে সেসব টাকা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি খাদ্য সংকট যাতে না আসে, সেই ব্যবস্থাও সরকার নিয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘তারা ঠিকমতো কাজ করেছে বলেই দেশে এখনো মহামারি নিয়ন্ত্রণে।’
মহামারির প্রেক্ষাপটে থমকে থাকা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল করার নির্দেশনা দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, ‘করোনায় কিছুটা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও, সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলো সচল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় হয়তো সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে কমিটি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সেগুলো এখন ধীরে ধীরে সম্পন্ন করতে হবে।’
সাংগঠনিক শক্তি সবচেয়ে বড় বিষয় উল্লেখ করে আওয়ামী সভাপতি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে যে সাংগঠনিক শক্তি দলের রয়েছে, তা এই করোনা মোকাবিলার সময় তারা যখন মাঠে নেমেছে, তখনই প্রমাণিত হয়েছে।’
মহামারিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মতো কেউ মাঠে ছিল না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত বড় স্যাক্রিফাইস আর কোনো দল তো বোধহয় করেনি, তারা শুধু লিপ সার্ভিস দিয়েছে। অনেক মিডিয়া আছে, অনেক পত্রিকা আছে। যে যার মতো যা খুশি বলে যাচ্ছে। অথচ কাউকে কিন্তু মাঠে দেখা যায় নি !’ আওয়ামী লীগ কতটুকু করলো আর কতটুকু করলো না, সেটি নিয়েই তারা সমালোচনা করে। কিন্তু নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময়, কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গরিব মানুষকে সেবা দেয়ার অনেক রকম প্রতিষ্ঠান আমরা সমাজে দেখি। কিন্তু এই করোনার সময়ে আমরা কাউকে মাঠে দেখিনি। আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, জনগণ নিয়েই আওয়ামী লীগ কাজ করে।’
এ সময় বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাস এবং আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা ও নির্বাচন প্রতিহতের নামে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের কথা পুনরুল্লেখ করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলাতে হয়, অন্যদিকে আন্দোলনের নামে যারা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে তাদেরও সামলাতে হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হয়েছে।’ সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভূমিহীনদের প্রতি সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।