বাংলাদেশে জঙ্গীরা আবার নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে- একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এই সংক্রান্ত রিপোর্ট দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, তৎপরতা থাকলেও জঙ্গীরা আগের মতো সংগঠিত নয়। তাঁরা এখন অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছে এবং তাঁদের বড় ধরণের অপরাধ সংগঠিত করার সক্ষমতা নেই।
এরকম আশাবাদ যখন বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শোনাচ্ছে, তখন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বাংলাদেশ সংক্রান্ত গোপন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে জঙ্গীরা সংঘবদ্ধ হচ্ছে এবং এখন জঙ্গীরা আলাদা সংগঠন নয়, বরং মূলধারার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোতে ঢুকে রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে সংগঠিত হচ্ছে। ঠিক যেমন করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময় জঙ্গীরা জামাতের মধ্যে এসে সংগঠিত হয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় এখন জঙ্গীরা বিএনপিতে যোগদান করছে। মার্কিন ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত দেড় বছরে ১ হাজারের বেশি জঙ্গী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপিতে যোগদান করছে এবং তাঁরা বিএনপির সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করছে। এই বিষয়টি মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতাকে অবহিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, জামাতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পরেই জঙ্গীদের টার্গেট হয় বিএনপি এবং জামাতের অনেক নেতাই বিএনপিতে যোগ দেন। এখন শুধু জামাত নয়, হিজবুত তাহরী, হরকাতুল জিহাদসহ অনেক জঙ্গী সংগঠনের কর্মীরা পরিকল্পিত এবং সংঘবদ্ধভাবে বিএনপিতে যোগদান করছে। এর কারণ একাধিক বলে মনে করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, এর ফলে তাঁরা মূলধারার রাজনীতিকে জঙ্গিবাদের দিকে প্রবাহিত করবে। মূল ধারার রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়াশীল এবং জঙ্গীদের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে এবং এক সময় তাঁরা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে অগণতান্ত্রিক পথে সশস্ত্র কায়দায় আন্দোলন-সংগ্রাম করবে এবং জনগণকে বিপর্যস্ত করবে। উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামী ছাত্রশিবির এবং জামাত ইসলামের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে আসছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্বের যে সমস্ত সংগঠনগুলো সশস্ত্র এবং জঙ্গী বলে তালিকাভুক্ত করেছে তাঁদের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবির একটি। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে, গত ৩ বছরে ইসলামী ছাত্রশিবির থেকে অন্তত পাঁচ হাজার নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগদান করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলে হয়েছে যে, বিএনপির এখন কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই এবং সাধারণ মানুষের বিএনপির ব্যাপারে আগ্রহ নেই। তারপরেও বিভিন্ন স্থানে বিএনপিতে নিত্যনতুন কর্মীরা যোগ দিচ্ছে এটা অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় যে, পরিকল্পিতভাবে জঙ্গী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তরা বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে। এর ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে যে সুনির্দিষ্ট মামলা সেই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক আবরণ দেওয়া সহজ হচ্ছে এবং একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের আবরণে থাকার কারণে তাঁরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারিতেও থাকছে না। এর ফলে তাঁদের জন্যে অপতৎপরতা চালানো, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করা অনেক সহজ হচ্ছে। বিএনপিকে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে একাধিকবার জঙ্গীদের সঙ্গে সংশ্রব ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও বিএনপি এসব ব্যাপারে কর্ণপাত করেনি। বরং সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে যখন জঙ্গীরা বিএনপির ছায়াতলে সংগঠিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্যে এবং সুস্থধারার রাজনীতির জন্যে নতুন শঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। আর এই ব্যাপারে এখনই তৎপর হওয়া দরকার বলেও তাঁরা মনে করছে। বিভিন্ন সময়ে জঙ্গী হামলার ঘটনা, বিশেষ করে ২০০৫ এর ১৭ আগস্ট যারা সারাদেশে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল বা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার রায়ের পর যে সমস্ত জঙ্গীরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়ে একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, সেই সমস্ত মামলার একাধিক আসামি এখন বিএনপিতে যোগদান করেছে। বিএনপিতে যখন সাধারণ কর্মীরা উৎসাহহীন, তখন এরা খুব সহজেই বিএনপিতে জায়গা করে নিচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।