ঢাকাবুধবার , ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার কথা কি ভুলতে বসেছি?

অপরাজিত বাংলা
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪ ১০:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আপনারা কি ইদানীং খেয়াল করেছেন যে ফেসবুকে জুলাই-অগাস্টের গণহত্যার কোন ক্লিপ বা কোন স্ট্যাটাস আর ভেসে বেড়াচ্ছেনা? খেয়াল করেছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার চালানো নির্যাতনের স্টিমরোলার নিয়ে কেউ লিখছেনা? কেউ ফ্যাসিস্ট হাসিনার সন্ত্রাসী দ্বারা পাখির মত গুলি করে মানুষ হত্যা নিয়ে কবিতা লিখেছেনা- খেয়াল করেছেন? অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া নিয়ে কোন পোস্ট ভাইরাল হচ্ছেনা কেন? খেয়াল করেছেন?

আমি করেছি। খুব নীরবের নিভৃতে কুকৌশলে আমাদেরকে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে জুলাই-অগাস্টের সেই ভয়ংকর গণহত্যার কথা। খুব টেকটিক্যালি আমাদের মানসপট থেকে উধাও করে দেওয়া হচ্ছে খুনী হাসিনার চালানোর ১৬ বছরের নির্যাতনের চিত্র। খুব সন্তর্পণে আমাদেরকে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মাধ্যমে একটা দেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার কাহিনী। এটাই মূলত বিপ্লবের পরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী খুনিদের সবচেয়ে বড় সফলতা।

কিন্তু এসব কিভাবে করা হচ্ছে?
সেই পুরানো থিওরী- ডিভাইড এন্ড রুল। ফ্যাসিস্ট বিরোধী যেই ঐক্য হাসিনার মসনদ ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল সেটাতে ফাটল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা খানিকটা সফলও হইছে। ফ্যাসিস্ট বিরোধী শক্তিগুলো এখন আলাদা হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লাগছে। বিএনপি- জামাত, কওমী-সুন্নী, ছাত্রদল-শিবির, ডান-বাম ইত্যাদী অনেকগুলো ব্যটল গ্রাউন্ড তৈরী করা হয়েছে। আন্দোলনের ক্রেডিট ভাগাভাগি নিয়ে খুব সুন্দর করে সামনে এনে ছাত্র-জনতাকে ভাগ করা হচ্ছে। শিবির আর ছাত্রদলকে মুখোমুখি করে দেওয়া হচ্ছে। শিবির কেন প্রকাশ্যে আসল বলে ছাত্রদলের আপত্তির আগুনে পতিত লীগাররা খুব রংচং মাখিয়ে ঘি ঢালছে। ছাত্রদলের নজর খুব সুন্দরকরে ছাত্রলীগের উপর থেকে ঘুরিয়ে শিবিরের উপরে ফেলা হয়েছে।
আর এদিকে ফ্যাসিস্ট বিরোধী শক্তিরা যখন নিজেদের মধ্যকার ক্যাচাল নিয়ে ব্যস্ত তখন খুব সন্তর্পণে পতিত আওয়ামিলীগের মিথ্যা আর গুজবের কান্ডারী আশরাফুল হল খোকন আর নিঝুম মজুমদারেরা আবার আওয়ামী বয়ান তৈরী করছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে। শিবিরের নেতৃত্বে আন্দোলন করে জনগণ চিটেড হইসে বলে আফসোসের ন্যারেটিভ তৈরী করছে আশরাফুল হক খোকন আর নিঝুম মজুমদারেরা। ছাত্র-জনতার বীরত্বকে ইগ্নোর করে অভ্যুত্থানকে জামাত-শিবিরের ষড়যন্ত্র বলে প্রতিষ্ঠিত করে হাসিনার গণহত্যাকে জায়েজ করার মিশনে প্রতিদিন হাজার হাজার আওয়ামী মিথ্যা গল্প তৈরী করছে পতিত স্বৈরাচারের সেই কুখ্যাত কুশীলবরা। আমরাও তাদেরকে হতাশজনকভাবে সুযোগ করে দিচ্ছি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

তাছাড়া, বেশিরভাগ খুনীরা সেইফ এক্সিট পাচ্ছে, পুরোনো দখলদার ও চাঁদাবাজরা নতুন দখলদারদের সাথে লিয়াজো করে পুরোনো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। চারপাশে খুনিদের পুনর্বাসন দেখলে মনে হবে যেন এ দেশে জুলাই রেভ্যুলুশন নামের তেমন কিছুই হয় নাই। এ দায় অন্তবর্তীকালীন সরকার এড়াতে পারে না। তবে এ দায় শুধুমাত্র অন্তবর্তীকালীন সরকারকে দেওয়াটাও আমার মনে হয় ফ্যাসিবাদের পিল্যু পাসিং কালচার। আমাদের নাগরিক সমাজও এখানে অনেকটা দায়বদ্ধ। কারণ আমাদের উচিত ছিলো পাচার হওয়া ১১ লক্ষ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারকে প্রেশার ক্রিয়েট করা, খুনিদের গ্রেফতার করার পরিবর্তে তাদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদ করা।আমাদের করণীয় ছিলো দুর্নীতিবাজ আমলাদের বরখাস্ত না করে তাদের পদায়নের প্রতিবাদ করা। অথচ এ আমলারা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদ বানানোর সবচেয়ে বড় সহযোগী। তাদের কতজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে? ঠিক কয়টা সচিবকে বিচারের কাঁঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে? কতজন পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
অথচ হিসেব চাওয়া তো দূরের কথা আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি নানা অপ্রয়োজনীয় আলাপে। কিছুই করতে পারি নাই বললে ভুল হবে। ত্রাণের নয় কোটি টাকা ব্যাংকে রাখাটাকে সমন্বয়করা আত্মসাৎ করেছে বলে সফলভাবে প্রচার করতে পেরেছি।

যাহোক, আমলাদের হিসেব না হয় উপর মহল দেখবে বলে এড়িয়ে গেলাম। কিন্তু ব্যবসায়ী নামধারী যে সিন্ডিকেট ও মাফিয়ারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শুয়োরের বাচ্চার অর্থনীতি বানাতে চেয়েছে, ব্যবসার নাম দিয়ে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে তাদের জন্য কি ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার? সুশীল সমাজ কিংবা নাগরিক সমাজ কি উদ্বেগ দেখিয়েছে? সিস্টেমের মারপ্যাঁচে ফেলে এতোদিন যে ব্যবসায়ী নামধারী শুয়োরের বাচ্চারা গরীবের রক্ত চুষে খেয়েছে তাদের কয়জনকে গ্রেফতার করেছে? তারই উদাহরণ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আনসার ক্যু, জুডিশিয়ারি ক্যু সহ নানা ইস্যু।

দেশের জন্য, আপনাদের জন্য, নিজেদের জন্য মায়া লাগে ভাই, সত্যিই মায়া লাগে। যে স্বৈরাচারররা ১৬ বছর ধরে আপনাদেরকে জাহান্নামের আগুনে রাখছিল তাদেরকে শুধু পূনর্বাসন করেই ক্ষ্যান্ত হচ্ছেন না, উল্টা তাদেরকে ঘরের ভিতরে নিরাপদে রেখে বাইরে এসে নিজেরা নিজেরা মারামারি করছেন।

এখনো সময় আছে, আবার এক হোন। লুকায়িত বা পূনর্বাসিত স্বৈরাচারের রক্তখেকোদের বের করে বিচারের মুখোমুখি করেন। ফোকাস ঠিক রাখেন- পতিত ফ্যাসিস্টদের উপর। কোন ছাড় নাই।প্রশাসনকে বলব, প্রত্যেকটা সন্ত্রাসীকে দ্রুত ধরেন। তারা যতদিন বাইরে থাকবে ততদিন তারা এই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রচনা করে যাবে। যার নজির ইতোমধ্যেই দেখেছেন। ফ্যাসিস্ট বিরোধী ভাই-বোনদের বলব, আপনারা জুলাই-অগাস্ট গণহত্যা নিয়ে লিখেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় গণহত্যা আর নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে দেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের তেজকে পূনর্মঞ্চায়ন করেন। এই মহান গণ-অভ্যুত্থানকে বারবার স্মরণ করে মানসপটে একে দিন স্থায়ীভাবে। যেন আর কোন স্বৈরাচার আমাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
সবশেষে বলতে চাই, প্রশাসনে বসে যারা ইনুমিনু করে স্বৈরাচারের দোসরদের পূনর্বাসন করছেন তাদের হিসাব আমরা নিব। হাজার শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী আমরা করতে দিবনা। হাজার হাজার আহত ভাই বোনদের নিদারুণ যন্ত্রণার কথা আমরা ভুলে যাবনা। আমারা জেগে আছি, জেগে থাকব।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।